Politics

গ্রিসের ‘গোল্ডেন ডন’ কে থামানো গিয়েছে – কিন্তু এর আদর্শ এখনও বেঁচে আছে

আদালতের রায়ের মাধ্যমে সংগঠন হিসেবে ‘গোল্ডেন ডন’ (Golden Dawn) এর কার্যক্রম স্থগিত করার প্রচেষ্টা সার্থক হয়েছে, কিন্তু এর সুদূরপ্রসারী প্রভাব থেকে গ্রিসকে মুক্ত করার সংগ্রাম এখনও সমাপ্ত হয়নি।
রাজনৈতিক বলয় এবং সংঘবদ্ধ অপরাধের সাথে গোল্ডেন ডনের সম্পৃক্ততা, ক্ষমতাসীন দল কর্তৃক সংগঠনটির কর্মসূচিগুলোর আত্মীকরণ, এবং সেনাবাহিনী ও পুলিশবাহিনীতে এর গভীর প্রভাব – সহজে নির্মূল করা সম্ভব নয়। আজ এথেন্সের আপিল আদালতের বাইরে যে দশ হাজার লোক ‘ওরা নিষ্পাপ না’ লেখা ব্যানার নিয়ে প্রতিবাদ করেছে, তাদের জন্য এটিই হবে পরবর্তী চ্যালেঞ্জ।
রাজনৈতিক বলয় এবং সংঘবদ্ধ অপরাধের সাথে গোল্ডেন ডনের সম্পৃক্ততা, ক্ষমতাসীন দল কর্তৃক সংগঠনটির কর্মসূচিগুলোর আত্মীকরণ, এবং সেনাবাহিনী ও পুলিশবাহিনীতে এর গভীর প্রভাব – সহজে নির্মূল করা সম্ভব নয়। আজ এথেন্সের আপিল আদালতের বাইরে যে দশ হাজার লোক ‘ওরা নিষ্পাপ না’ লেখা ব্যানার নিয়ে প্রতিবাদ করেছে, তাদের জন্য এটিই হবে পরবর্তী চ্যালেঞ্জ।

৭ই অক্টোবর গ্রিসের আদালত দেশটির ফৌজদারি আইনে বর্ণিত গুরুতর অভিযোগগুলোর সাথে সংশ্লিষ্ট একটি দৃষ্টান্তমূলক মামলার নিষ্পত্তি করেছে। আদালত রাজনৈতিক দলের লেবাস পরিহিত ‘গোল্ডেন ডন’ (Golden Dawn) নামক নব্য-নাৎসি সংগঠনকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করার মাধ্যমে, সংগঠনটির প্রায় ৪০ বছরের ইতিহাস এবং সংসদীয় দল হিসাবে পথচলার পরিসমাপ্তি রেখা টানা হয়েছে।

তাদের রাজনৈতিক লেবাসটি ছিল অসাধারণ। ২০১৩ সালে গোল্ডেন ডন সদস্য গিওর্গোস রুপাকিয়াসের হাতে ফ্যাসিবাদ বিরোধী র‍্যাপ-শিল্পী পাভলোস ফিসাসের হত্যার ঘটনাটি সংগঠনটির নীতি ও গ্রহনযোগ্যতাকে প্রশ্নের সম্মুখীন করে, এবং এটির কারণে একটি দীর্ঘ আইনি তদন্তের সূত্রপাত হয়। অথচ, ২০১৩ সালের আগ পর্যন্ত, গণমাধ্যমগুলো নিয়মিতভাবে গোল্ডেন ডনকে স্থানীয় পর্যায়ে অভিবাসনের কারণে সৃষ্ট সমস্যাগুলোর বিরুদ্ধে সোচ্চার ‘সচেতন নাগরিক সমাজ’ হিসাবে উপস্থাপন করে চলেছিল। অন্যদিকে, বিভিন্ন গল্প গুজবে এবং কলামগুলো সংগঠনটির সদস্যদের ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে বেশ উচ্ছ্বসিত ছিল। ২০০৯ সালে গোল্ডেন ডনের এথেন্সের নগরসভায় প্রবেশ এবং ক্রমান্বয়ে ২০১২ সালে সংসদে আসন পাওয়ার ঘটনাগুলোও বেশ আড়ম্বরের সাথে পালিত হয়েছিল। গোল্ডেন ডন ২০০৪ সাল থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত ক্ষমতায় থাকা দলগুলোর ভাবধারার সাথে তাল রেখে নিজেদের অভিবাসন-বিরোধী নীতি প্রণয়ন ও প্রচার করছিল, এবং উপস্থিত রাজনৈতিক লক্ষ্যগুলো পূরণের উদ্দেশ্যে একই সাথে কট্টর ডানপন্থী দলগুলোকেও ব্যবহার করে চলেছিল।

কিন্তু বর্তমানে যেসব কর্মকাণ্ডের জন্য সংগঠনটি নিষিদ্ধ ঘোষিত হচ্ছে, সেগুলো অতীতের থেকে ভিন্ন কিছু নয়। ’৮০ -র দশকের প্রথমভাগে যাত্রা শুরু করা গোল্ডেন ডনের বিরুদ্ধে প্রথম থেকেই সহিংসতার অভিযোগ ছিল। তারপর, ২০০৯ সালের পরে, সংগঠনটির দ্রুত বিকাশ এবং সংসদীয় নির্বাচনে যোগদানের সময়কালেও, এর সদস্যদের জন সমাবেশ, সামরিক জমায়েত এবং অভিবাসীদের ওপর সংঘবদ্ধ আক্রমণের ঘটনাগুলো টিভি পর্দায় উঠে এসেছিল।

সংঠনটির আরও সহিংস কর্মকাণ্ড, যেমন ২০১১ সালে এথেন্স শহরের কেন্দ্রে ঘটানো অভিবাসী-বিরোধী সাম্প্রদায়িক সহিংসতা, ২৮ বছর বয়সী পাকিস্তানি নাগরিক শাখজাত লুকমানের নির্মম হত্যাকাণ্ড, মিসরীয় এক জেলের বাড়িতে রাতের অন্ধকারে হামলা চালিয়ে তাকে হত্যা করার চেষ্টা, ধর্মঘটের পোস্টার প্রস্তুতরত বন্দরের শ্রমিকদের ওপর হামলা, এবং সংগঠনটির বিরুদ্ধে চলাকালীন দীর্ঘ বিচার-প্রক্রিয়া - এসব ঘটনার খবর গণমাধ্যমে খুব কমই প্রকাশিত হয়েছে। যার ফলে, সাধারণ জনগণ সরলভাবে বিশ্বাস করেছে যে, গোল্ডেন ডনের সহিংস ও জঘন্য কার্যক্রমগুলোও ছিল সহনীয় ও সীমিত, এবং এর সদস্যদের অস্বচ্ছন্দ্যের বহিঃপ্রকাশ মাত্র।

গোল্ডেন ডন ২০১২ সালের জুন মাসে প্রথমবার সংসদ নির্বাচনে অংশ নিয়ে ৭% ভোট পেয়েছিল। অপরদিকে, বিচার-প্রক্রিয়া শুরু হওয়ার পূর্বের এক সমীক্ষা অনুযায়ী, এর সমর্থন ১০% এর কিছু বেশি ছিল। প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী এন্তোনিস সামারাস-এর কট্টর ডানপন্থী নব্য গণতান্ত্রিক (New Democracy) সরকার সংগঠনটাকে কেমন চোখে দেখত, তা স্পষ্ট হয়েছিল ২০১৪ সালে, যখন গোল্ডেন ডনের মুখপাত্র ইলিয়াস কাসিদিয়ারিস তার সাথে প্রধানমন্ত্রীর সহকারী তাকিস বালতাকোসের একটি কথোপকথনের ভিডিও ফাঁস হয়েছিল। ফাঁস হওয়া ভিডিওটিতে দেখা গিয়েছিল যে, উক্ত দুইজন গোল্ডেন ডনের বিচার-প্রক্রিয়াটি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করছেন। ভিডিওটি থেকে এটা প্রতীয়মান হয়েছিল যে, সামারাসের সাথে গোল্ডেন ডনের নিয়মিত যোগাযোগ ছিল, আর এক্ষেত্রে বালতাকোস মাধ্যম হিসাবে কাজ করতেন।

২০১৩ সালের পর, সংগঠনটির সদস্যদের গ্রেফতার ও বিচার প্রক্রিয়া চলতে থাকে, এবং পর্যায়ক্রমে এর ভেতরের কার্যক্রমগুলো উন্মোচিত হয়ে পড়ে। সদস্যদের স্বীকারোক্তি এবং আলোকচিত্র প্রমাণের মাধ্যমে, তাদের সামরিক প্রশিক্ষণ কেন্দ্র ও অস্ত্রের মজুদের অস্তিত্ব, এবং সংঘবদ্ধ অপরাধের সাথে বহুবিধ সংযোগের কথা প্রকাশিত হতে থাকে।। তাছাড়া, সংগঠনটির আদর্শ এবং গঠনতন্ত্রের ওপর নাৎসিবাদের প্রভাব সম্পর্কেও বিপুল সংখ্যক প্রমাণ পাওয়া যায়। এসব ঘটনায় গোল্ডেন ডনের জনসমর্থন কমতে থাকলেও, ২০১৫ সালে অনুষ্ঠিত দুটি নির্বাচনেই এটি যথাক্রমে ৬% এবং ৭% ভোট পেতে সমর্থ হয়, যা ছিল গ্রিক নির্বাচনী ব্যবস্থা অনুসারে সংসদে আসন পেতে প্রয়োজনীয় ন্যুনতম ৩% ভোটের থেকেও বেশি।

পাভলো ফিসাসের প্রতি মৃত্যুবার্ষিকীতে আয়োজিত ফ্যাসিবিরোধী র‍্যালি এবং অসংখ্য রাজনৈতিক সংগঠন ও সাংবাদিকের প্রচেষ্টা ছিল গোল্ডেন ডনের আসল রূপ সম্পর্কে সচেতনতা সৃষ্টিতে গুরুত্বপূর্ণ। তাছাড়া, ২০১৯ সালের সাধারণ নির্বাচনে সংগঠনটির অংশগ্রহণকে অসম্ভব করে তোলা এবং পর্যায়ক্রমে এর সাংগঠনিক অস্তিত্বকে বিলুপ্ত করার ক্ষেত্রেও উপরোক্ত প্রচেষ্টাগুলো ভূমিকা রেখেছিল বলে কোন সন্দেহ নেই।

তবে, শুধুমাত্র এসব প্রচেষ্টার ভূমিকাই মুখ্য ছিল না। বিশেষত, সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে যে, নির্বাচনের সময় গোল্ডেন ডনের ভোটারদেরই অধিকাংশ বরঞ্চ ডানপন্থী নব্য গণতান্ত্রিক দলটির দিকে ঝুঁকে পড়েছিল। তৎকালীন সরকার প্রেস্পেস চুক্তির মাধ্যমে গ্রিসের প্রতিবেশী দেশের নতুন নাম ‘উত্তর মেসিডোনিয়া’ -কে স্বীকৃতি প্রদান করে। আর নব্য গণতান্ত্রিক দলটি এই চুক্তির বিপক্ষে একটি আবেগপ্রবণ জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের সফল সূত্রপাত ঘটিয়ে, ২০১৯ সালের জুলাইতে ৩৯% ভোট পেয়ে নির্বাচনে জয়লাভ করে। এখনও গোল্ডেন ডনের সামাজিক আন্দোলন পুরো গ্রিস জুড়ে ঘটতে থাকা শরণার্থী-বিরোধী বিক্ষোভ ও দাঙ্গাগুলোর মধ্যে প্রাণ ধারণ করে আছে, এবং সেগুলোর সংখ্যা ও উগ্রতা উত্তরোত্তর বৃদ্ধিও পাচ্ছে।

প্রেস্পেস চুক্তিটি ছিল গোল্ডেন ডনের শেষ শক্ত অবস্থান, যদিও এবার সংগঠনটি নিজেদের সকল বাহাদুরির কথা ২০১৩ সালের আগের বছরগুলির মতো একবাক্যে স্বীকার করেনি। তথাপি, সাংবাদিকদের ওপর সহিংস হামলা, সামাজিক অনুষ্ঠানকেন্দ্র এবং অন্য দলগুলোর সদর দপ্তরে অগ্নি-সংযোগ ও ভাঙচুর; বামপন্থী এবং অ্যানার্কিস্টদের ওপর বিভিন্নভাবে হামলা; ‘ফ্যাসিবাদ-বিরোধীদের বুকে ছুরি চালাও’ –এর মতো স্লোগান (যা কিনা পাভলোস ফিসাসের হত্যাকাণ্ডটিকে সরাসরি নির্দেশ করে); প্রেস্পেস চুক্তির পক্ষে ভোট দেয়া এমপিদের নামে শহরের ল্যাম্পপোস্টে ‘ধরিয়ে দিন’ লেখা পোস্টার ঝুলানো এবং রাতের বেলায় তাদের বাড়ির বাইরে বিক্ষোভ করা – সংগঠনটির এমন সব কুখ্যাত কার্যক্রম ছিল স্পষ্ট দৃশ্যমান।

অবশেষে, গোল্ডেন ডনকে যেসব কাজের দায়ভার নিতে হয়েছিল, তা হল-হেলেনিক সংসদকক্ষে ইলিয়াস কাসিদিয়ারিসের হাতেনব্য গণতান্ত্রিক দলের সাবেক পুলিশমন্ত্রী নিকোস দেন্দিয়াসের শারীরিক লাঞ্ছনা, এবং বর্তমান প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতিকে তাদের সংসদীয় অবস্থানের জন্য দেশদ্রোহী বলে আখ্যায়িত করে তাদেরকে গ্রেফতার করার জন্য সেনাবাহিনীকে আহ্বান জানানোর পর এমপি কস্তাস বারবারৌসিসের পুলিশের হাত থেকে পালিয়ে গাড়িতে করে পালানোর ব্যর্থ প্রচেষ্টা – এমন সব নাটকীয় ঘটনা।

প্রেস্পেস চুক্তির বিরুদ্ধে বিক্ষোভটি সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ে জাতীয়তাবাদী উন্মাদনাকে ইন্ধন যুগিয়েছিল সত্যি, কিন্তু গোল্ডেন ডনের চাইতে কিরিয়াকোস মিৎসোতাকিস-এর নব্য গণতান্ত্রিক দলটি বেশি সমর্থ হয়েছিল এই উন্মাদনাকে কাজে লাগাতে। চুক্তির বিরোধিতা করা প্রতিবাদগুলো যতই সহিংস হোক না কেন, মিৎসোতাকিস সেগুলোকে তৎকালীন সিরিযা সরকারের বিপক্ষে রণনীতি হিসেবে ব্যবহার করেছিলেন। পরিহাসের ব্যাপার হল, গোল্ডেন ডনের সর্বপ্রথম মূলধারার আন্দোলনটি ছিল ‘৯০ -এর দশকের শুরুতে উত্তর মেসিডোনিয়ার সাথে প্রস্তাবিত একটি চুক্তির বিরুদ্ধে বিক্ষোভ প্রদর্শন, যা কিনা তখন মিৎসোতাকিসের পিতাকে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করতে বাধ্য করেছিল।

বিদ্বেষী মনোভাবধারী নব্য গণতান্ত্রিক দলটি যখন প্রেস্পেস চুক্তির বিপক্ষে আন্দোলন করেছে, সেই সময়ে গোল্ডেন ডন চলমান বিচার-প্রক্রিয়ার প্রভাবে আস্তে আস্তে ভেঙে পড়েছে। এছাড়া, ২০১৩ সালের পর থেকে, অভ্যন্তরীণ কোন্দল, দলাদলি এবং সদস্যদের মধ্যে পারস্পরিক অভিযোগের ঘটনা দলটির জন্য নিয়মিত ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। বর্তমানে দলটির কেন্দ্রীয় নেতাদের প্রায় সকলেই দল থেকে আলাদা হয়ে নিজেদের ব্যক্তিগত দল গঠন করেছেন। অনেকে এই ঘটনাকে গোল্ডেন ডনের কঠোর ক্রমাধিকারতন্ত্র সম্পর্কে যে অভিযোগ আছে, সেটিকে এড়ানোর কৌশল বলে সন্দেহ করলেও, এতে করে মূল দলটির দলীয় কর্মকাণ্ড চালানোর সামর্থ্যও যে হ্রাস পেয়েছে তাতে সন্দেহ নেই। ২০১৪ সালের পর থেকে, ধীরে ধীরে দলটির বিভিন্ন অফিস বন্ধ করে দেয়া হয়, এবং গত নির্বাচনে পরাজয়ের পর, এথেন্সে অবস্থিত সদর দপ্তরটি পর্যন্ত খালি করা হয়।

আজ, সংগঠন হিসাবে গোল্ডেন ডনের অস্তিত্ব বিলুপ্ত হয়েছে। কিন্তু, আদালতের এই রায়ে গোল্ডেন ডন তার রাজনৈতিক প্রভাব হারিয়ে ফেলার পরও গল্প এখানেই শেষ হয়ে যায়নি।। রাজনৈতিক বলয় এবং সংঘবদ্ধ অপরাধের সাথে গোল্ডেন ডনের সম্পৃক্ততা, ক্ষমতাসীন দল কর্তৃক সংগঠনটির কর্মসূচিগুলোর আত্মীকরণ, এবং সেনাবাহিনী ও পুলিশবাহিনীতে এর গভীর প্রভাব – এসব সহজে নির্মূল হবার নয়। আজ এথেন্সের আপিল আদালতের বাইরে যে দশ হাজার লোক ‘ওরা নিষ্পাপ না’ লেখা ব্যানার নিয়ে প্রতিবাদ করেছে, তাদের জন্য এটিই হবে পরবর্তী চ্যালেঞ্জ।

এথেন্স ভিত্তিক ইয়ানিস-ওরেস্তিস পাপাদিমিত্রিউ একজন ফ্রিল্যান্স সাংবাদিক। তিনি ‘দ্য ম্যানিফোল্ড’ নামক একটি অনুসন্ধানী সংগঠনের সদস্য। এই সংগঠনটির সদস্যরা এথেন্স, নিকোশিয়া এবং লন্ডনে বসবাস করেন।

অ্যান কিরানান দ্বারা চিত্রিত.

Available in
EnglishGermanItalian (Standard)BengaliFrenchPortuguese (Brazil)SpanishHindiPortuguese (Portugal)Turkish
Author
Yannis-Orestis Papadimitriou
Translators
Pritom Tikader and
Date
14.10.2020
Source
Original article🔗
Privacy PolicyManage CookiesContribution Settings
Site and identity: Common Knowledge & Robbie Blundell