ভারত সরকারকে অবিলম্বে অহিংস বিক্ষোভকারীদের বিনা দোষে অভিযুক্ত করা এবং তাদের উপর পুলিশি জুলুম বন্ধ করার জন্য প্রোগ্রেসিভ ইন্টারন্যাশনালের সদস্যরা আহবান জানিয়েছেন। নাগরিকত্ব সংশোধন আইন, ২০১৯ (সিএএ) এর মতো বৈষম্যমূলক আইনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ ও প্রতিরোধ, ভারতবর্ষের মতো একটি দেশে অবশ্যম্ভাবী - যেখানে ধর্মের ভিত্তিতে বৈষম্য কখনই মেনে নেওয়া হয় নি। এমন বৈষম্যমূলক আইনের বিরুদ্ধে যারা আপত্তি জানাতে চায়, তাদের কন্ঠরোধ করতে কঠোর, সন্ত্রাসবাদবিরোধী এবং অভ্যন্তরীণ সুরক্ষা সংক্রান্ত আইন ব্যবহার করা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। যে কোনও আইনসিদ্ধ গণতন্ত্রে মানুষের অন্যতম মৌলিক অধিকার হল প্রতিবাদের অধিকার - যা সংবিধান দ্বারা সুরক্ষিত।
এই মুহূর্তে ভারতে দুটি বড় ফৌজদারি তদন্ত গুরুতর উদ্বেগের বিষয় হয়ে উঠেছে, কারণ এগুলি পক্ষপাতদুষ্ট ও রাজনৈতিক উদ্দেশ্য দ্বারা প্রভাবিত বলে মনে করা হচ্ছে। ভিন্নমত পোষণকারী রাজনৈতিক মতাদর্শকে লক্ষ্য করে তদন্তকারী সংস্থাগুলি ব্যবহার করার এক বিপজ্জনক প্রবণতা এদেশে সাম্প্রতিককালে লক্ষ্যণীয়। ২০২০ এর দিল্লি দাঙ্গা, এবং ২০১৮ সালের ভীম-কোরেগাঁওয়ের ঘটনা, এই দুটি পৃথক মামলাকে ঘিরে এক সুপরিকল্পিত ও ফাঁদ পাতা চলছে বলে মনে করা হচ্ছে। সন্ত্রাসবিরোধী ও জাতীয় সুরক্ষা আইনের আওতায় অভিযুক্ত ও দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছে বহু মানুষজনকে, যাঁদের অনেকেই দীর্ঘসময় যাবৎ সামাজিক, রাজনৈতিক ও গণতান্ত্রিক সুরক্ষা বিষয়ক কাজের জন্য সুপরিচিত। একইভাবে, জম্মু ও কাশ্মীরের সংবিধানের ৩৭০ অনুচ্ছেদ বাতিল করার পরে, গত আগস্ট (২০১৯) থেকে অনেক রাজনৈতিক বিরোধী নেতাকর্মী ও সক্রিয়তাবাদীদের কারাবন্দী করা হয়েছে। জম্মু ও কাশ্মীরের জনগণ অনির্দিষ্টকালের জন্য জারি হওয়া জরুরী অবস্থায় বসবাস করছে এবং তাদের ইন্টারনেটের মতো মৌলিক ও অপরিহার্য যোগাযোগ মাধ্যম থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে।
ইতিমধ্যে ভারতজুড়ে শতাধিক মানুষকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে যার বেশিরভাগই মুসলিম সম্প্রদায়ের।একই সাথে মানবাধিকার ও নাগরিক অধিকার কর্মীদেরও নিশানা করা হয়েছে যারা সংখ্যালঘুদের উপর বৈষম্য ও নির্যাতনের বিষয়গুলিতে সরকারের নীতির বিরোধিতা করতে পারে বলে মনে করা হয়। তাদের মধ্যে রয়েছে প্রোগ্রেসিভ ইন্টারন্যাশনালের কাউন্সিল সদস্য হর্ষ মান্ডার, দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের লেখক অধ্যাপক অপূর্বানন্দ, বিশিষ্ট চলচ্চিত্র নির্মাতা ও কর্মী রাহুল রায়, খ্যাতিমান বুদ্ধিজীবী ও রাজনৈতিক কর্মী যোগেন্দ্র যাদব এবং উমর খালিদ, জওহরলাল নেহেরু বিশ্ববিদ্যালয় (জেএনইউ) এর শিক্ষাবিদ এবং কর্মী। সাম্প্রতিককালে, এক বড় ষড়যন্ত্রের অংশ হিসাবে দিল্লি দাঙ্গার তদন্তে ভারতের কমিউনিস্ট পার্টির (মার্কসবাদী) সাধারণ সম্পাদক ও পলিটব্যুরো সদস্য সীতারাম ইয়েচুরি ও আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক জয়তি ঘোষের নামও যুক্ত করা হয়েছে।
পূর্বে, ভীম-কোরেগাঁও মামলায় সহিংসতার দোষীদের বিচারের পরিবর্তে, যে সব কর্মী সামাজিক ন্যায়বিচারের জন্য তাদের জীবন উৎসর্গ করেছিল এবং দূর দূরান্তে কোন ধরণের সহিংসতায় জড়িত ছিল না তাদের বিরুদ্ধে অন্যায়ভাবে বিচার করা হচ্ছে। তাদের মধ্যে রয়েছেন ভারভারা রাও (৭৯) নামে একজন কবি, কর্মী ও আইনজীবি সুধা ভরদ্বাজ, কর্মী ও সাংবাদিক গৌতম নলখা, ভারতের অন্যতম শীর্ষস্থানীয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনার অধ্যাপক আনন্দ তেলতুম্বেদে, যিনি একই সাথে দলিত গোষ্ঠীর অধিকার নিয়ে কাজ করার জন্য পরিচিত, এবং অন্য কর্মীরা যারা মিথ্যা ও ভিত্তিহীন অভিযোগে কারা হেফাজতে রয়েছে।
বর্তমান ক্ষমতাসীন দল জাতীয় গণতান্ত্রিক জোট (এনডিএ) শান্তিপূর্ণভাবে ভিন্নমত পোষণকারীদের যথেচ্ছভাবে গ্রেপ্তার করার জন্য সক্রিয় চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে যার ফলে ভারতীয় গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার অপূরণীয় ক্ষতি হচ্ছে। এই ধরণের গ্রেপ্তার নাগরিকদের কাছে একটি শীতল বার্তা প্রেরণ করে যে সরকারের নীতির সাথে মতানৈক্য বা তার সমালোচনা আর সহ্য করা হবে না।
ভারত সরকারের এই আচরণ, মানবাধিকার সুরক্ষার জন্য আন্তর্জাতিক পরিকাঠামোয় গ্রহণ অযোগ্য এবং সেটি ভারতীয় সংবিধান বিরোধী। প্রোগ্রেসিভ ইন্টারন্যাশনাল ভারত সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে:
১. রাজনৈতিক এবং সামাজিক কর্মীদের অবিলম্বে মুক্তি দিন এবং তাদের বিরুদ্ধে মামলা বাতিল করুন।
২. গণতান্ত্রিক ভিন্নমতপোষণকারী ও কর্মীদের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবিরোধী ও জাতীয় সুরক্ষা আইনের প্রয়োগ বাতিল এবং ব্যবহার বন্ধ করুন।
৩. বৈষম্যমূলক নাগরিকত্ব (সংশোধন) আইন, ২০১৯ বাতিল করুন।
প্রোগ্রেসিভ ইন্টারন্যাশনাল কাউন্সিল সদস্যরা:
অরুণা রায় ( সমাজ কর্মী ও প্রতিষ্ঠাতা সদস্য, মজদুর কিষান শক্তি সংগঠন ( এমকেএসএস )
অরুন্ধতী রায় (লেখক ও কর্মী)
জন ড্র্রেজ ( উন্নয়ন অর্থনীতিবিদ এবং সমাজ ও শান্তি কর্মী)
সারিকা সিনহা (নারী অধিকার ও সমাজ কর্মী)
বিজয় প্রসাদ (পরিচালক ট্রাইকন্টিনেন্টাল: সামাজিক গবেষণা ইনস্টিটিউট