২০১৩ সালের ২৪ এপ্রিল ঢাকার বাইরে সাভারে রানা প্লাজা ভবনটি ধসে পড়ে। আগের দিন নিচ তলার ব্যাংক ও দোকানগুলো দেয়ালে ফাটল দেখে বন্ধ করা দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু ওপরের তলার গার্মেন্ট কারখানাগুলো খোলা রাখা হয়। পরের সকালে ভবনটি ধসে পড়ে ১,১০০ জনের বেশি শ্রমিক নিহত এবং আরও হাজারো মানুষ আহত হন ও আজীবনের জন্য ক্ষতির মুখে পড়েন। ১৯ দিন ধরে ধ্বংসস্তুপের নিচে বেঁচে থাকা মানুষদের খোঁজার চেষ্টা চলে।
বাংলাদেশের গার্মেন্ট শিল্পের জন্য রানা প্লাজা শুধু একটি প্রতীক নয়, এটি একটি গভীর ক্ষত। যেসব নারী–পুরুষ মারা গেছেন, তাঁরা সেইদিন কাজ করতে গিয়েছিলেন কারণ তাঁদের সামনে কোনো বাস্তবসম্মত বিকল্প ছিল না। তাঁরা দেয়ালের ফাটল অনুভব করেছিলেন, সতর্কবার্তা শুনেছিলেন। কিন্তু মজুরি হারানোর ভয়, “কাজ পেয়ে ভাগ্যবান” বলা—এসব চাপ তাদেরকে ভেতরে রেখেছিল।
ধসের পর শ্রমিক ইউনিয়ন ও বৈশ্বিক ইউনিয়নগুলো যেমন UNI Global Union এবং IndustriALL Global Union কেবল প্রেস রিলিজ নয়, তার চেয়ে বেশি কিছু দাবি করে। আমরা একটি আইনগতভাবে বাধ্যতামূলক চুক্তি দাবি করি, যা ব্র্যান্ডগুলোকে নিরাপত্তার জন্য অর্থ পরিশোধে বাধ্য করবে, স্বাধীন পরিদর্শন নিশ্চিত করবে এবং শ্রমিকদের নিজেদের জীবন রক্ষায় ভূমিকা রাখবে।
ফলাফল ছিল বাংলাদেশ অ্যাকর্ড অন ফায়ার অ্যান্ড বিল্ডিং সেফটি। এটি ছিল আইনগতভাবে বলবৎযোগ্য, যেখানে শুধু কারখানার ওপর নয়, বরং ব্র্যান্ডগুলোর ওপরও স্বচ্ছতা ও দায়িত্বের ভার ন্যস্ত করা হয়েছিল। দুই শতাধিক ব্র্যান্ড এই চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছিল।
আর এটি কাজ করেছিল। অ্যাকর্ডের আওতায় থাকা কারখানাগুলোতে মারাত্মক বিপদগুলো—যেমন তালাবদ্ধ জরুরি বহির্গমন পথ, অতিরিক্ত ভারে ঠাসা ফ্লোর, অরক্ষিত তারের কাজ—এগুলোর সমাধান করা হয়েছিল। শ্রমিকরা বিপদের জায়গাগুলো চিহ্নিত করতে পারতেন এবং তারপরই প্রতিকারের ব্যবস্থা নেওয়া হতো। এটাই হলো স্বেচ্ছামূলক প্রতিশ্রুতির বদলে আইনত বাধ্যতামূলক চুক্তির ক্ষমতা।
কিন্তু আজও, এক দশকেরও বেশি সময় পর, সবচেয়ে বড় ও ধনী কিছু রিটেইল কোম্পানি সই করতে অস্বীকৃতি জানায়। তাদের মধ্যে একটি হলো Amazon।
Amazon এখন যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে বড় পোশাক বিক্রেতা— প্রায় সব পরিচিত ব্র্যান্ডের চেয়ে তারা বেশি পোশাক বিক্রি করে। তাদের লজিস্টিকস সাম্রাজ্যকে বিপ্লবী বলা হয়। প্রতিষ্ঠাতা বহুবার বিলিয়নিয়ার হয়েছেন। আর তাদের বিক্রি করা পোশাক? অনেকটাই তৈরি হয় আমাদের বাংলাদেশি শ্রমিকদের হাতে।
কিন্তু নিরাপত্তার ক্ষেত্রে Amazon সীমারেখা টেনে দিয়েছে : তারা অ্যাকর্ড বা এর পরবর্তী চুক্তিতে স্বাক্ষর করবে না। Amazon যখন সই করতে অস্বীকৃতি জানায়, তখন এটি বিশ্বকে বলে : আমাদের নিরাপত্তা মানদণ্ড মুনাফার সীমা পর্যন্তই। এই বার্তাটি সরবরাহ শৃঙ্খলজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে : Amazon-এ সরবরাহ চালিয়ে যেতে চাইলে আপনাকে খরচ–সময়ের চাপ মাথায় নিয়ে কাজ করতে হবে। নিরাপত্তা সেখানে একটি ঐচ্ছিক বিষয়।
আমরা জানি এটা সত্যি, কারণ বাংলাদেশে বিপর্যয় এমন ভুল থেকে আসেনি যা কেউ দেখেনি, বরং এমন সতর্কবার্তা থেকে আসে যা কেউ আমলে নেয়নি। রানা প্লাজা ধসের আগের দিন বড় বড় ফাটল দেখা দিয়েছিল, দোকান ও ব্যাংক বন্ধ হয়েছিল। কর্তৃপক্ষ তা উপেক্ষা করে। শ্রমিকদের কাজে ফিরে আসতে বলা হয়। একটি কারখানা হুমকি দেয় যে না এলে পুরো মাসের বেতন আটকে দেওয়া হবে।
আমি ১১ বছর বয়সে গার্মেন্ট কারখানায় কাজ শুরু করি এবং শোষণ, চাপ ও ভয়ের বাস্তবতা দেখেছি। এখন আমি সম্মিলিত গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশন নেতৃত্ব দিই এবং Progressive International-এর কাউন্সিলে কাজ করি। আমি আমাদের দশ হাজারেরও বেশি সদস্যের পক্ষে কথা বলি, যারা বাংলাদেশের গার্মেন্ট শিল্পে কাজ করেন। আমরা ২৮ নভেম্বর ২০২৫ ব্ল্যাক ফ্রাইডেতে ‘মেক Amazon পে’ বৈশ্বিক আন্দোলনে যোগ দিচ্ছি। বিশ্বজুড়ে Amazon-এর গুদাম, ডেলিভারি হাব ও অফিসের শ্রমিকরা ধর্মঘট ও বিক্ষোভ করবে এবং আমরা বাংলাদেশি গার্মেন্ট শ্রমিকরা তাদের সঙ্গে থাকব।
কেন? কারণ আমাদের জীবন মূল্যবান। কারণ সস্তা জিন্স বিক্রি করার জন্য যেসব নারী প্রাণ হারিয়েছেন, তাঁরা কেবল স্মৃতিস্তম্ভ বা শূন্য স্লোগানের যোগ্য নন। কারণ অ্যাকর্ডে সই করা কোনো অনুগ্রহ নয়, এটি মর্যাদা ও নিরাপত্তার ন্যূনতম শর্ত।
আমাদের দাবি স্পষ্ট :
— Amazon-কে অ্যাকর্ডে সই করতে হবে এবং আইনগতভাবে বাধ্যতামূলক নিরাপত্তা মানদণ্ডে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হতে হবে। — সরবরাহকারী তালিকা প্রকাশ করতে হবে এবং পরিদর্শন ফলাফল সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করতে হবে। — তাদের পণ্যের জন্য এমন মূল্য দিতে হবে যা কারখানাগুলোকে নিরাপত্তায় বিনিয়োগ করতে এবং জীবনধারণের উপযোগী মজুরি দিতে সক্ষম করে—কেবল ন্যূনতম মজুরি নয়, যাতে ব্র্যান্ডগুলো তাদের মুনাফার হার উচ্চ রাখতে পারে। — সরবরাহকারী কারখানায় ইউনিয়ন দমন বন্ধ করতে হবে এবং শ্রমিকদের সংগঠিত হওয়া ও সমষ্টিগত দরকষাকষির অধিকারকে সম্মান করতে হবে। — ILO কনভেনশন ১৯০ অনুযায়ী সরবরাহ শৃঙ্খলজুড়ে লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতা ও হয়রানির প্রতি শূন্য সহনশীলতা নিশ্চিত করতে হবে। এর মধ্যে থাকতে হবে বাধ্যতামূলক প্রতিরোধ নীতি ও কার্যকর অভিযোগ প্রক্রিয়া। — পরিবেশগত নিরাপত্তা ও পেশাগত স্বাস্থ্য–নিরাপত্তার দায়িত্ব নিতে হবে।
বাংলাদেশের শ্রমিকরা জানে “সস্তা” জিনিসের প্রকৃত মূল্য কী। গার্মেন্ট শ্রমিকদের বর্তমান ন্যূনতম মজুরি মাসে মাত্র ১০৫ ডলার। আমরা এটাও জানি চাপ কখনও কমে না। ব্র্যান্ড দ্রুত ডেলিভারি চাইলে কারখানা সময় কমায়, মজুরি কাটে, তদারকি কমায়, এবং অনিরাপদ ভবনে আউটসোর্স করে। এই যুক্তিই মানুষ হত্যা করে। আমি আপনাদের পোশাক কেনা বন্ধ করতে বলছি না, বরং ভালো কিছু দাবি করতে বলছি। আপনারা Amazon-কে লিখতে পারেন, বিক্ষোভে যোগ দিতে পারেন, ইউনিয়নকে সমর্থন করতে পারেন।
Amazon গতিশীল, সুবিধাজনক ও শৃঙ্খলাবদ্ধ ডেলিভারির বৈশ্বিক সাম্রাজ্য গড়েছে। আমরা গড়ছি বৈশ্বিক সংহতি, মর্যাদা ও ন্যায়ের আন্দোলন। ২৮ নভেম্বর আমরা আমাদের কণ্ঠ তুলব : আমাদের জীবন ফেলনা নয়; নিরাপত্তা কোনো বিকল্প নয়।
সময় এসেছে Amazon-কে মূল্য পরিশোধ করানোর—প্রতিশোধ নয়, বরং ন্যায়ের খাতিরে।
নাজমা আক্তার, সম্মিলিত গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি ও Progressive International-এর কাউন্সিল সদস্য।