Labor

ভারতীয় কর্মীদের কাছে শ্রম বিধি কী গুরুত্ব বহন করছে?

স্বাধীনতার পর থেকে ভারতে প্রচলিত চারটি শ্রম বিধি শ্রমিকদের অধিকারকে উল্লেখযোগ্যভাবে দুর্বল করেছে।
আইন পালনকে সহজতর করতে এবং ব্যবসায়িক দক্ষতা বাড়াতে প্রয়োজনীয় সংস্কার হিসাবে তৈরি শ্রম বিধিগুলো ট্রেড ইউনিয়ন এবং বিরোধীদলগুলোর মধ্যে দেশব্যাপী বিক্ষোভের সূত্রপাত করেছে। এই বিধিগুলো একটি বিতর্কিত আইনী ইতিহাস থেকে উদ্ভূত হয়ে রাজনৈতিক অস্থিরতার মধ্যে দিয়েএবং ত্রিপক্ষীয় পরামর্শ ছাড়াই পাস হয়েছে। তাদের বাস্তবায়ন রাষ্ট্রীয়-স্তরে বৈষম্য বাড়ানো এবং শ্রম নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে বাজার-পরিচালিত আদর্শকে ত্বরান্বিতকরার ঝুঁকি বাড়ানোর ফলে ইউনিয়নগুলোকে সতর্ক করেছে যে, এই বিধি অনিশ্চিত কর্মসংস্থানের প্রাতিষ্ঠানিকীকরণ করে বেসরকারীকরণের পথ প্রশস্ত করতেপারে।

২০২৫ সালের ২১ নভেম্বর, শুক্রবার, কেন্দ্রীয় শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় চারটি শ্রম বিধির নিয়মাবলী সম্পর্কে জানিয়েছে। এই সংস্কার বিদ্যমান ২৯টি কেন্দ্রীয়শ্রম আইনকে ধারণ করে এবং বাতিল করে।

এই বিধিগুলো – মজুরি সম্পর্কিত বিধি, ২০১৯শিল্প সম্পর্ক বিধি, ২০২০সামাজিক নিরাপত্তা সম্পর্কিত বিধি, ২০২০; এবং পেশাগত সুরক্ষা, স্বাস্থ্য এবংকাজের শর্তাদি বিধি, ২০২০ – স্বাধীনতার পর থেকে ভারতের শ্রম আইনের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য পুনর্গঠনকে নির্দেশ করে।

যদিও সরকার দাবি করছে যে এই সংস্কারগুলো আইন পালন সহজতর করে এবং সামাজিক নিরাপত্তা সার্বজনীন করে ব্যবসা করা শুধু "সহজতর" নয়, বরং“ব্যবসা করার গতি”-ও উন্নত করবে, তবুও ট্রেড ইউনিয়ন ও বিরোধী দলগুলো দেশব্যাপী প্রতিবাদ শুরু করেছে। তারা এই পদক্ষেপকে একতরফা চাপিয়ে দেওয়াবলে অভিহিত করেছে, যা শ্রমজীবী শ্রেণীর কষ্টার্জিত অধিকারের অবসান ঘটাচ্ছে।

এই প্রজ্ঞাপনের প্রেক্ষাপট কী? 

সংসদে পাসের প্রায় ছয় বছর পরে দীর্ঘায়িত প্রশাসনিক অনিশ্চয়তা পার করে এই বিধি কার্যকর হয়। এগুলোর আইনী ইতিহাসের মূলে রয়েছে রাজনৈতিকবিতর্ক। ২০১৯ সালে মজুরি সংক্রান্ত বিধি পাস হয়েছিল, বাকি তিনটি – শিল্প সম্পর্ক, সামাজিক সুরক্ষা এবং পেশাগত সুরক্ষা, স্বাস্থ্য এবং কাজের শর্তাদি বিধি  (OSH) – ২০২০ সালের সেপ্টেম্বরে পাস হয়েছিল।

উল্লেখযোগ্যভাবে, বিরোধী দল কৃষি বিল নিয়ে কার্যক্রম বর্জন করার পর সংসদ একটি সংক্ষিপ্ত অধিবেশনে ২০২০ সালের বিধিগুলোকে ছাড়পত্র দিয়েছে। এইসময়ে নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন (CAA) এবং COVID-19 মহামারীর চাপ নিয়ে ব্যাপক নাগরিক অশান্তি চলছিল।

সমালোচকরা এর প্রাথমিক ত্রুটি হিসাবে ত্রিপক্ষীয় পরামর্শের অভাবকে উল্লেখ করেছেন। ইন্ডিয়ান লেবার কনফারেন্স (ILC) – একটি শীর্ষস্থানীয় প্রক্রিয়াযেখানে সরকার, নিয়োগকর্তা ও শ্রমিকরা নীতিমালার বিষয়ে আলোচনা করেন – ২০১৫ সালের পর থেকে আর অনুষ্ঠিত হয়নি। এই কারণে ক্ষমতাসীন মহলথেকেও সমালোচনা হয়েছে। 

২০২৫ সালের মার্চ মাসে ভারতীয় জনতা পার্টির (BJP) সিনিয়র নেতা এবং শ্রম সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির চেয়ারপার্সন বাসভরাজ বোমাই ILCঅনুষ্ঠানে ব্যর্থ হওয়ায় প্রকাশ্যে কেন্দ্রীয় সরকারের সমালোচনা করেছিলেন। তিনি আরো বলেন যে এই ধরনের ভুল শ্রম সংস্কারের গণতান্ত্রিক বৈধতাকে ক্ষুণ্ণকরে।

‘বিধি’ কেন হয় এবং ফেডারালিজমের উপর এর প্রভাব কী?

নির্দিষ্ট "আইন" কে "বিধি" তে একীভূত করা কোন ছোটখাটো পরিবর্তন নয় বরং কাঠামোগতভাবে ঢেলে সাজানো। সংসদ ২৯ টি বিবিধ আইনকে একত্রিতকরে, কার্যকরভাবে "বিধি"-র মাধ্যমে নির্বাহী প্রশাসন (ইউনিয়ন এবং রাজ্য সরকার) কে যথেষ্ট আইনী ক্ষমতা অর্পণ করেছে।

উল্লেখযোগ্য বিবরণ – যেমন সর্বনিম্ন মজুরি, নিরাপত্তা সীমা, বা সামাজিক নিরাপত্তা সীমার নির্দিষ্ট বিবরণ – যা পূর্বে আইনগুলোয় বিস্তারিত ভাবে অন্তর্ভুক্তকরা হয়েছিল, তা এখন "নিয়ম" এর মধ্যে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।  সরকার চাইলেই এগুলোকে অবিলম্বে সংসদীয় যাচাই-বাছাই ছাড়াই প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমেপরিবর্তন করতে পারে।

যেহেতু সার্বিক তালিকায় ‘শ্রম’ রয়েছে, তাই কেন্দ্রীয় সরকার এবং রাজ্য উভয়কেই এই বিধিগুলো কার্যকর করার জন্য নিয়ম তৈরি করতে হবে। কেন্দ্রীয় সরকারবিধিগুলো সম্পর্কে বিজ্ঞপ্তি জারি  করলেও এর আইনি প্রেক্ষাপট আজও বিভাজিত।  উত্তরপ্রদেশ, কর্ণাটক, অন্ধ্রপ্রদেশ ও গুজরাটের মতো "ব্যবসা-বান্ধব" রাজ্যগুলো দৈনিক কাজের সীমা বৃদ্ধি এবং সেলফ সার্টিফিকেশন প্রবর্তনের নিয়ম আগেই তৈরি করেছে।

তবে তামিলনাড়ু এবং পশ্চিমবঙ্গের মতো শক্তিশালী ইউনিয়ন সহ রাজ্যগুলো নিয়মগুলো প্রতিষ্ঠায় দেরি করেছে। এভাবে "আইন পালনে অসমতা" তৈরিহওয়ায় রাজ্য জুড়ে শ্রমের মানদণ্ডগুলো ব্যাপকভাবে পরিবর্তিত হতে পারে। বিশ্লেষকরা আশঙ্কা করছেন যে এতে পরিস্থিতি অনেক খারাপ পারে। রাজ্যগুলোসবচেয়ে "নমনীয়" বা অনিয়ন্ত্রিত নিয়ম তৈরি করে অভিন্ন কর্মী সুরক্ষা কমিয়ে মূলধন বাড়ানোর জন্য প্রতিযোগিতা করবে।

রাজ্য-শ্রমের সম্পর্ক কীভাবে বিকশিত হয়েছে?

এই প্রজ্ঞাপন "সুরক্ষাবাদ" থেকে "সুবিধাবাদ" পর্যন্ত ভারতীয় রাজ্যের দার্শনিক পরিবর্তনকে চিহ্নিত করে।

১৯৪৭ সালের পরে শ্রম আইন – শিল্প বিরোধ আইন, ১৯৪৭ এবং কারখানা আইন, ১৯৪৮- কে বিচার করলে – এই ভিত্তিতে নির্মিত হয়েছিল যে মূলধন এবংশ্রমের মধ্যে সম্পর্ক সহজাতভাবে অসম। রাষ্ট্র চাকরির নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে, কর্মীছাঁটাই নিয়ন্ত্রণ করতে এবং কল্যাণমূলক ব্যবস্থা বাধ্যতামূলক করতেহস্তক্ষেপ করেছিল, যা পুঁজির স্বেচ্ছাচারী ক্ষমতা নিয়ন্ত্রণে ভূমিকা রাখে।

তবে ১৯৯১-এর পরবর্তী উদারীকরণের ফলে একটি মৌলিক পরিবর্তন দেখা গেছে। ইন্টারন্যাশনাল মনেটারি ফান্ড (IMF) এবং বিশ্বব্যাংকের মতো আন্তর্জাতিকআর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো যুক্তি দিয়েছিল যে ভারতের "কঠোর" শ্রম আইন, বিশেষত ছাঁটাই এবং বন্ধ বিষয়ক আইনগুলো বিনিয়োগে বাধা দেয়। ১৯৯৯ সালেনিযুক্ত দ্বিতীয় জাতীয় শ্রম কমিশন (SNCL) এই দৃষ্টিভঙ্গিকে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রতিষ্ঠা করে।

SNCL অসংগঠিত খাতের জন্য একটি পৃথক "বিশেষ সংরক্ষিত আইন" প্রস্তাব করার সঙ্গে শ্রম আইনের "যুক্তিসঙ্গতকরণের" নামে নিয়োগ ও ছাঁটাই সংক্রান্তবিধিনিষেধ সহজতর করতে চেয়েছিল। বর্তমান বিধিগুলো SNCL-এর রোডম্যাপটি বাস্তবায়ন করে। এগুলো এই দৃষ্টিভঙ্গি বাস্তবায়ন করে যে শ্রমঅধিকারগুলো অবশ্যই বাজারের চাহিদার সাথে খাপ খাইয়ে তৈরি করতে হবে, যা শ্রমিক, নিয়োগকর্তা ও রাষ্ট্রের মধ্যে সামাজিক চুক্তি মৌলিকভাবে পরিবর্তনকরে।

এই চারটি বিধিতে কি আছে?

মজুরি বিধি, ২০১৯

এই বিধিটি ন্যূনতম মজুরি আইন, ১৯৪৮ এবং বোনাস প্রদান আইন, ১৯৬৫ সহ চারটি আইনকে বিলুপ্ত করে। "সর্বনিম্ন মজুরি" নিয়ে একটি বড় অস্পষ্টতারয়েছে। বিধিটি কেন্দ্রীয় সরকারকে একটি সর্বনিম্ন মজুরি ঠিক করার আদেশ দেয়। কোনো রাজ্য এর থেকে ন্যূনতম মজুরি নির্ধারণ করতে পারে না। তবে এটিসরকারকেরাপটাকোস ব্রেট মামলায় (১৯৯২) সুপ্রিম কোর্ট কর্তৃক নির্ধারিত পুষ্টি ও ভোগের মানদণ্ড মেনে চলতে সংবিধিবদ্ধভাবে বাধ্য করে না। সমালোচকরাআশঙ্কা করছেন যে এই সিদ্ধান্ত জীবনযাপনের জন্য পর্যাপ্ত মজুরির পরিবর্তে দারিদ্র্য সৃষ্টিকারী মজুরি বাড়াবে।

কাঠামোগতভাবে, ধারা 2(y) ‘মজুরি’-র একটি অভিন্ন সংজ্ঞা প্রবর্তন করে, মোট পারিশ্রমিকের 50% বেশি ভাতা (যেমন HRA বা পরিবহণ) নিষিদ্ধ করে। এরবেশি ভাতা দিলে অতিরিক্ত অর্থ প্রভিডেন্ট (PF )এবং গ্র্যাচুইটি গণনা করার সময় মূল মজুরির সাথে যোগ করা হয়। এটি সামাজিক নিরাপত্তা তহবিলবাড়ালেও অনেক কর্মচারীর মাসিক বেতন কমিয়ে ফেলে।

প্রশাসনিকভাবে, ধারা 51 প্রথাগত "লেবার ইন্সপেক্টর" কে "ইন্সপেক্টর-কাম-ফ্যাসিলিটেটর" দিয়ে প্রতিস্থাপন করে। এই নাম পরিবর্তন প্রয়োগকারী থেকেউপদেষ্টামূলক কার্যকরী পরিবর্তনের ইঙ্গিত দেয়, যা শারীরিক যাচাইয়ের পরিবর্তে "ওয়েব-ভিত্তিক" এবং "এলোমেলো" পরিদর্শনকে অগ্রাধিকার দিচ্ছে। এছাড়াএই বিধি অপরাধের "সমঝোতা" করার ব্যবস্থা রাখে, যাতে নিয়োগকর্তারা আর্থিক জরিমানা প্রদানের মাধ্যমে মামলা এড়িয়ে যেতে পারেন। সমালোচকদেরযুক্তিতে এটি অবৈধতাকে অর্থ উপার্জনের কাজে লাগিয়ে মজুরি চুরিকে একটি অপরাধ থেকে নিয়ন্ত্রণযোগ্য ‘ব্যবসার খরচ’-এ পরিণত করছে।

শিল্প সম্পর্ক (IR) বিধি, ২০২০

ট্রেড ইউনিয়ন আইন, ১৯২৬ এবং শিল্প বিবাদ আইন, ১৯৪৭-কে একীভূত করে এই বিধি বিবাদ নিষ্পত্তি ও চাকরির স্থায়িত্বে আমূল পরিবর্তন এনেছে।

 সবচেয়ে বিতর্কিত হল ‘নিয়োগ এবং ছাঁটাই’- এর সম্প্রসারণ। পূর্ববর্তী শাসনের অধীনে, ১০০ বা ততোধিক কর্মী সহ প্রতিষ্ঠানে ছাঁটাই বা বন্ধ করার জন্যসরকারী অনুমতি লাগতো। অধ্যায় X এই সীমাকে ৩০০ জন শ্রমিকে উন্নীত করে। বার্ষিক শিল্প সমীক্ষা অনুসারে, এটি ভারতের ৯০% এরও বেশি শিল্পকারখানাকে তদন্ত থেকে বাঁচায় এবং নিয়োগকর্তাদের ইচ্ছামত শ্রমিকদের ছাঁটাই করার সুযোগ দেয়।

এই সহজ নিয়মগুলোর ভারসাম্য বজায় রাখার জন্য,ধারা 83 একটি "রিস্কিলিং ফান্ড" প্রতিষ্ঠা করে, যার ফলে নিয়োগকর্তাদের প্রতিটি ছাঁটাই প্রাপ্ত কর্মীকে ১৫দিনের মজুরি প্রদান করতে হয়। ট্রেড ইউনিয়নগুলো এটিকে দীর্ঘমেয়াদী চাকরির নিশ্চয়তার বদলে দেওয়া এক সামান্য, এককালীন অর্থপ্রদান হিসেবে খারিজকরে দিচ্ছে। নিরাপত্তাকে আরো দুর্বল করে দিয়ে ধারা 2(o) "নির্দিষ্ট মেয়াদী চাকরি"-কে আইনি স্বীকৃতি দেয়, যা নিয়োগকর্তাদের যেকোনো কাজের জন্য, এমনকিস্থায়ী প্রকৃতির কাজের জন্যও কর্মীদের নির্দিষ্ট সময়ের জন্য নিয়োগের সুযোগ দেয়। এটি কর্তৃপক্ষকে স্থায়ী মেয়াদে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ না হয়ে বারবার চুক্তি নবায়নকরার সুযোগ দেয়।

বিধিটি সম্মিলিত দর কষাকষিকেও প্রভাবিত করে। ধারা 62 মোতাবেক ধর্মঘটের আগে সব শিল্প প্রতিষ্ঠানের শ্রমিকদের ১৪ দিনের নোটিশ প্রদান করতে হবে।সঙ্গত কারণে, সমন্বয় প্রক্রিয়া চলাকালীন ধর্মঘট নিষিদ্ধ। যেহেতু ধর্মঘটের নোটিস পাওয়ার সাথে সাথে সমন্বয় প্রক্রিয়া শুরু হয়ে যায় এবং রাষ্ট্র এটিঅনির্দিষ্টকালের জন্য দীর্ঘায়িত করতে পারে, তাই বৈধ ধর্মঘট করার আইনি সুযোগ কার্যত বন্ধ হয়ে যায়। এছাড়া "স্থায়ী আদেশ" প্রণয়ন এখন শুধুমাত্র ৩০০বা ততোধিক শ্রমিক রয়েছে এমন প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য (পূর্বের ১০০ থেকে বৃদ্ধি পেয়ে), যা কার্যত ছোট ছোট কারখানার ক্ষেত্রে আইনের শাসন অপসারণকরেছে।

সামাজিক নিরাপত্তা সম্পর্কিত বিধি, 2020

এমপ্লয়িজ প্রভিডেন্ট ফান্ড (EPF) আইন সহ নয়টি আইনকে একত্রিত করে এই বিধিটি প্রথমবারের মতো "গিগ কর্মী" এবং "প্ল্যাটফর্ম কর্মী"-দের স্বীকৃতি দিয়েছে(ধারা 2(35))। তবে এটি তাদের "কর্মচারী" হিসাবে সংজ্ঞায়িত করা বন্ধ করে দেয়। ফলস্বরূপ, উবার বা জুমাটোর মতো এগ্রিগেটররা PF-এর মতো প্রচলিতঅবদান দিতে দায়বদ্ধ নয়। এর পরিবর্তে, বিধিটি সমষ্টির বার্ষিক টার্নওভারের উপর ১-২% শুল্ক দ্বারা অর্থায়িত একটি কল্যাণ তহবিল প্রস্তাব করে। এর ফলেঅধিকারের বদলে উপশুল্কের ভিত্তিতে একটি কল্যাণমূলক মডেল তৈরি হয়।

তদুপরি, নিবন্ধনের জন্য 142 ধারায়  আধার কার্ড ব্যবহার করা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। প্রচলিত নথিভুক্তিকরণ ত্রুটির প্রেক্ষাপটে সমালোচকরা মনে করেনযে এটি অভিবাসী কর্মীদের জন্য একটি প্রযুক্তিগত বাধা বা "ডিজিটাল বর্জন" সৃষ্টি করবে।

2020পেশাগত নিরাপত্তা, স্বাস্থ্য (OSH) এবং কাজের পরিবেশ সংক্রান্ত বিধি, ২০২০

১৩টি আইন প্রতিস্থাপন করে, এই বিধিটি 'কারখানা'-র সংজ্ঞা পুনর্নির্ধারণ করেছে (ধারা 2(w)) । এতে শক্তি ব্যবহারের ক্ষেত্রে শ্রমিকের সংখ্যার ন্যূনতম সীমা১০ থেকে বাড়িয়ে ২০ এবং শক্তি ব্যবহার না করলে ২০ থেকে বাড়িয়ে ৪০ করা হয়েছে। এই নিয়ন্ত্রণমুক্তকরণ কঠোর নিয়মনীতির আওতা থেকে হাজার হাজারক্ষুদ্র উৎপাদন ইউনিটকে সরিয়ে দিয়েছে, যেখানে নিরাপত্তার মান খুবই খারাপ থাকে। একইভাবে, নতুন বিধি এখন শুধুমাত্র ৫০ বা ততোধিক কর্মী (যা ২০থেকে বাড়ানো হয়েছে) নিয়োগকারী ঠিকাদারদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য, যার ফলে মূল নিয়োগকর্তারা আইন পালন করা এড়াতে নিজেদের কর্মীবাহিনীকে বিভাজিতকরতে চাইছেন।

বিধিটি দৈনিক ৮ ঘণ্টার কাজের সীমা বজায় রাখলেও, এটি "স্প্রেড-ওভার" সময় (ব্যাপ্তিকালীন সময়) এর ধারণা প্রবর্তন করেছে, যার সংজ্ঞা বিধি দ্বারানির্ধারিত হবে। ট্রেড ইউনিয়নগুলোর আশঙ্কা, এর ফলে দীর্ঘ বিরতির অজুহাতে রাজ্য সরকারগুলো আইনগতভাবে কর্মদিবস ১২ ঘণ্টায় প্রসারিত করতে সক্ষমহবে। এছাড়া ধারা ১২৮ সরকারকে সাধারণ প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে যেকোনো প্রতিষ্ঠানকে এই আইনের আওতা থেকে অব্যাহতি দানের ক্ষমতা দিয়েছে, যা মূলতনির্বাহী বিভাগকে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলের মতো খাতগুলোর জন্য নিরাপত্তা আইন সংসদীয় অনুমোদন ছাড়াই স্থগিত করার সুযোগ করে দেয়।

ট্রেড ইউনিয়নগুলো কেন বিধিগুলোর বিরোধিতা করছে?

প্রজ্ঞাপনটি কেন্দ্রীয় ট্রেড ইউনিয়নগুলোর যৌথ প্ল্যাটফর্ম (CTUs) এবং সংযুক্ত কিষাণ মোর্চা (SKM)-এর তরফে অবিলম্বে প্রতিবাদের সৃষ্টি করে।

তাদের বিরোধিতা তিনটি স্তম্ভের উপর নির্ভর করে।

1.     প্রথমত, তারা পদ্ধতিগত অবৈধতার উল্লেখ করেছে, যুক্তি দিয়ে বলেছে যে বিতর্ক ছাড়াই আইন পাস করা এবং আন্তর্জাতিক শ্রম সম্মেলনের(ILC) অধিবেশন না ডেকে সেগুলো প্রজ্ঞাপিত করা আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (ILO) কনভেনশন লঙ্ঘন করে। 2.     দ্বিতীয়ত, সেন্ট্রাল ট্রেড ইউনিয়ন (CTU)-দের দাবি হলো- কার্যকরভাবে ধর্মঘট নিষিদ্ধ করা, স্থায়ী আদেশগুলোকে দুর্বল করা এবং চাকরিরনিরাপত্তা প্রত্যাহার করার মাধ্যমে শ্রম বিধিগুলো শ্রমিকদের "প্রায় দাসত্বের" অবস্থায় নামিয়ে এনেছে, যার ফলে তাদের সম্মিলিত দর কষাকষিরক্ষমতা লোপ পেয়েছে। 3.     সবশেষে, [ অল ইন্ডিয়া পাওয়ার ইঞ্জিনিয়ারস ফেডারেশন (AIPEF)-এর মতো ইউনিয়নগুলো দাবি করে](https://www.thehindu.com/news/national/protests-erupt-against-labour-codes-privatisation-push/article70326404.ece) যে এই বিধিগুলো বেসরকারীকরণেরপূর্বশর্ত। তাদের যুক্তি হল, সরকারি ক্ষেত্রে শ্রমিক নিরাপত্তার বিধান সরিয়ে দেয়া একটি কৌশলগত পদক্ষেপ, যা দায়বদ্ধতা কমিয়ে রাষ্ট্রীয়সম্পদকে বেসরকারি ক্রেতাদের কাছে আরো আকর্ষণীয় করে তোলে।
Available in
EnglishSpanishPortuguese (Brazil)GermanFrenchItalian (Standard)ArabicHindiBengaliRussian
Author
Pavan Korada
Translators
Subrina Afrin, Santanu Ghosh and ProZ Pro Bono
Date
15.12.2025
Source
The WireOriginal article🔗
LaborIndia
Privacy PolicyManage CookiesContribution SettingsJobs
Site and identity: Common Knowledge & Robbie Blundell