সাম্প্রতিক বছরগুলোয় এই জাতীয় অভ্যুত্থানের অভিজ্ঞতা অর্জনকারী এটিই প্রথম বা শেষ ফরাসি উপনিবেশ ছিল না, যা ফ্রাঙ্কোফোন আফ্রিকায় নব্য-উপনিবেশবাদ, নির্ভরতা এবং সার্বভৌমত্বের সংগ্রামের দীর্ঘকালীন প্রশ্নের দিকে নতুন করে দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিল।
এই বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনার জন্য প্রগ্রেসিভ ইন্টারন্যাশনালের মাইকেল গ্যালান্ট আফ্রিকার রাজনৈতিক অর্থনীতির উদীয়মান তারকা এবং পশ্চিম ও মধ্য আফ্রিকায় "আর্থিক সাম্রাজ্যবাদ" এর বিশিষ্ট সমালোচক ডাঃ এনডোঙ্গো সাম্বা সিলার সাক্ষাৎকার নিয়েছিলেন।
এই সাক্ষাৎকারটি প্রথম দ্য ইন্টারন্যাশনালিস্টের #৬০তম সংখ্যায় প্রকাশিত হয়।
MG: এনডোঙ্গো, আমাদের সাথে যোগ দেয়ার জন্য ধন্যবাদ।
NSS: আমাকে ডাকার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।
MG: কয়েক দশকের নৃশংস ঔপনিবেশিকরণ এবং বহু বছরের কঠোর লড়াই আর প্রতিরোধের পর, ১৯৫০ এবং ৬০ এর দশকে ফরাসী ঔপনিবেশিক আফ্রিকার জাতীয় মুক্তির সংগ্রামে জয়ের তরঙ্গ দেখা গিয়েছিল।
তবে বিশ্বের বেশিরভাগের মতো নামমাত্র স্বাধীনতা প্রকৃত স্বাধীনতায় রূপ নেয়নি। ‘ফ্রাঙ্কআফ্রিক’ সম্পর্কে আপনি কি আমাদের কিছু বলতে পারেন — স্বাধীনতার পরে ফ্রান্স কীভাবে এই অঞ্চলে আধিপত্য বজায় রেখেছিল এবং সেখানকার বসবাসকারীদের ওপর এর কী প্রভাব পড়েছিল?
NSS: সেকু তোরের গিনি বাদে, সাহারার দক্ষিণে ফ্রান্সের প্রাক্তন ঔপনিবেশিক অঞ্চলগুলো কখনই প্রকৃত স্বাধীনতা অর্জন করতে পারেনি। ফ্রান্স তাদের নিম্নোক্ত চুক্তিগুলোর প্রস্তাব দিয়েছিল: "আমরা বৈদেশিক বিষয়, বৈদেশিক বাণিজ্য, কৌশলগত কাঁচামাল, শিক্ষা, প্রতিরক্ষা, মুদ্রা ও আর্থিক ব্যবস্থাপনা ইত্যাদি ক্ষেত্রে সার্বভৌমত্ব ত্যাগ করার শর্তে আপনার অঞ্চলকে স্বাধীনতা দিচ্ছি।" যে আফ্রিকান নেতারা এসব ক্ষেত্রে "সহযোগিতা চুক্তি" স্বাক্ষর করতে সম্মত হয়েছিলেন তাদের বেশিরভাগই ফরাসি ঔপনিবেশিকতার আমলে দীক্ষিত রাজনীতিবিদ। তাদের মধ্যে কয়েকজন ফরাসি মেট্রোপলিটন সরকার বা সংসদের সদস্য ছিলেন। এমনকি তাদের অনেকেই দেশ স্বাধীন হয় তা চায়নি। জেনারেল দ্য গল এই নব্য ঔপনিবেশিক পরিকল্পনার আশ্রয় নিয়েছিলেন কারণ, তার মতে আফ্রিকার ওপর আধিপত্য এবং এর সম্পদের উপর নিয়ন্ত্রণ কোল্ড ওয়ারে ফ্রান্সের কৌশলগত স্বায়ত্তশাসনের একটি মৌলিক শর্ত। এই বিষয়টি বিবেচনা করে, ফ্রান্স তার প্রাক্তন উপনিবেশগুলোয় জনগণকে স্বাধীনভাবে তাদের নিজস্ব নেতা নির্বাচন করতে দেয়নি। এটি — একটি ফ্রাঙ্কোফোন আফ্রিকা যা নামমাত্র স্বাধীনতা সত্ত্বেও, ফরাসি নব্য-ঔপনিবেশিক নিয়ন্ত্রণের অধীনে "ফ্রাঙ্কআফ্রিক" হিসেবে নানা রূপে টিকে আছে।
শেষপর্যন্ত, ফরাসী সাম্রাজ্যবাদের কারণে সাহারার দক্ষিণে তার প্রাক্তন উপনিবেশগুলোর অবস্থার মারাত্মক অবনতি হয়েছে এবং সেখানে সংরক্ষিত, প্রতিক্রিয়াশীল রাজনৈতিক ব্যবস্থা তৈরি হয়েছে যা জনগণ কী চিন্তা করে বা চায়- তার পরোয়া করে না, এমনকি আনুষ্ঠানিকভাবে "গণতান্ত্রিক" হলেও না। এর ফলস্বরূপ, ফ্রান্স এবং পশ্চিমের সমর্থনপ্রাপ্ত বিশ্বের সবচেয়ে ধনী নেতাদের কয়েকজন-বিশ্বের সবচেয়ে দরিদ্র কয়েকটি দেশ শাসন করছে।
MG: আপনার কাজ বিশেষত "আর্থিক সাম্রাজ্যবাদকে স্থায়ী করতে" পশ্চিম এবং মধ্য আফ্রিকায় ব্যবহৃত দুটি মুদ্রা — সিএফএ ফ্রাঙ্কের ভূমিকা নিয়ে। আর্থিক সাম্রাজ্যবাদ কী, এবং এর বিকল্প, আর্থিক সার্বভৌমত্ব কী?
NSS: গত দুই শতাব্দী ধরে, সাম্রাজ্যবাদী উচ্চাকাঙ্ক্ষী দেশগুলো তাদের শাসিত অঞ্চলগুলোতে সংকুচিত এবং ক্ষতিকারক মুদ্রানীতি ও আর্থিক ব্যবস্থা আরোপ করেছে — কঠোর নির্দিষ্ট বিনিময় হার ব্যবস্থা আরোপ করা; বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ নিয়ন্ত্রণ, আর্থিক ব্যবস্থা ও ক্রেডিট এবং অর্থনৈতিক উদ্বৃত্ত নির্ধারণ করা। শাস্তিমূলক শাসনব্যবস্থা (নিষেধাজ্ঞা জারি করার সম্ভাবনা সহ) ছাড়াও, আর্থিক সাম্রাজ্যবাদ প্রভাবশালী দেশগুলোর অর্থনৈতিক ও আর্থিক শক্তি জোরদার করতে কাজ করে, যারা তাদের শাসিত দেশগুলোর মানব ও বস্তুগত সম্পদগুলো অবাধে ভোগ করছে।
এই আর্থিক সাম্রাজ্যবাদ আফ্রিকা থেকে এশিয়া থেকে লাতিন আমেরিকা এবং ক্যারিবিয়ান পর্যন্ত বিশ্বজুড়ে বিভিন্ন উপায়ে প্রকাশ পেয়েছে। [1] সিএফএ ফ্রাঙ্ক, যা মূলত আফ্রিকার ফরাসি উপনিবেশগুলোর ফ্রাঙ্ক, ১৯৪৫ সালে প্রবর্তিত হয়েছিল এবং ফরাসি সাম্রাজ্যের সাব-সাহারান অংশে ব্যবহৃত হত। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং মার্কিন ডলারের প্রাধান্য সম্বলিত একটি নতুন অর্থনৈতিক এবং আর্থিক গ্লোবাল অর্ডারে, এই ঔপনিবেশিক মুদ্রা ব্যবস্থা ফ্রান্সকে তার দুর্লভ ডলারের রিজার্ভ সংরক্ষণ করতে সহায়তা করে, যাতে ফ্রান্স নিজস্ব মুদ্রা ব্যবহার করে সিএফএ জোনে আমদানি করতে পারে। এটি ফ্রান্সকে নিজস্ব আমদানির জন্য তার উপনিবেশগুলোর ডলার রিজার্ভ ধরে রাখতে এবং বিনিময় হার স্থিতিশীল করতে সহায়তা করে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ফ্রান্স এবং এর আফ্রিকান উপনিবেশগুলোর মধ্যে বাণিজ্য ব্যাহত হওয়ার কারণে, এই ঔপনিবেশিক মুদ্রা ব্যবস্থা ফ্রান্সকে হারানো ট্রেড শেয়ার পুনরুদ্ধার করতে সহায়তা করে। স্বাধীনতার পরে, আমার পূর্বে উল্লেখিত সহযোগিতা চুক্তিগুলোর কারণে আর্থিক সাম্রাজ্যবাদের এই ব্যবস্থাকে তার কার্যকরী নীতিতে অপরিবর্তিত রাখা হয়েছে। আজ, দুটি মুদ্রা — পশ্চিম আফ্রিকান সিএফএ এবং মধ্য আফ্রিকান সিএফএ, যা যথাক্রমে আটটি এবং ছয়টি দেশ ব্যবহার করে — সরাসরি ইউরোর (পূর্বে ফরাসি ফ্রাঙ্ক) দিকে ঝুঁকছে, আর্থিক নীতি পরিবর্তনের জরুরী হাতিয়ার স্বাধীন সরকারগুলোর হাত থেকে কেঁড়ে নিচ্ছে এবং সেটিকে ফরাসি ট্রেজারি এবং ইউরোজোনের রাজনৈতিক ও আর্থিক কর্তৃপক্ষের নিয়ন্ত্রণে রেখেছে।
যেহেতু আর্থিক সাম্রাজ্যবাদ মানে কোন দেশের জনগণের স্বাধীন উন্নয়নে দেশীয় মুদ্রা এবং অর্থ ব্যবহার করার ক্ষমতা অস্বীকার করা, কাজেই এটি অর্থনৈতিক এবং আর্থিক সার্বভৌমত্বের জন্য একটি বাধা। আর্থিক সার্বভৌমত্বকে কেবল সরকারের নিজস্ব মুদ্রা জারি করার অধিকার বলে মনে করা উচিত নয়। আমার মতে, এটি অবশ্যই প্রথমে সংজ্ঞায়িত করা উচিত, আধুনিক অর্থ তত্ত্ব (এমএমটি) এর প্রেক্ষিতে অন্তর্নিহিত আর্থিক সীমাবদ্ধতা ছাড়াই সরকারের ব্যয় করার ক্ষমতা, তবে প্রকৃত সংস্থানগুলোর প্রাপ্যতার ক্ষেত্রে কেবল একটি সীমাবদ্ধতা। দক্ষিণের দেশগুলোর ক্ষেত্রে, তাদের নিম্ন স্তরের আর্থিক সার্বভৌমত্ব প্রকৃত সম্পদের উপর তাদের নিয়ন্ত্রণের অভাবকে প্রতিফলিত করে (যা প্রায়শই আন্তঃদেশীয় কর্পোরেশনগুলো দ্বারা চুরি করা হয়, যার ফলে মাঝে মাঝে উচ্চ সুদের হারে বৈদেশিক মুদ্রায় ঋণ নেয়ার প্রয়োজন হয়) এবং নিষ্কাশনের উদ্দেশ্যে এমন একটি অর্থনৈতিক মডেল অনুসরণ করে- যা তাদের মার্কিন ডলার ধরে রাখার প্রয়োজনকে আরও জোরালো করে, কারণ আন্তর্জাতিক পেমেন্ট সিস্টেম আজো মার্কিন ডলারের ওপর নির্ভর করে সংগঠিত।
MG: মালি, বুরকিনা ফাসো, নাইজার, গ্যাবন। গত তিন বছরে, সামরিক অভ্যুত্থানের তরঙ্গ ফ্রাঙ্কোফোন আফ্রিকাকে বার বার গ্রাস করেছে। যদিও প্রতিটি বিক্ষোভই আলাদা, তবে বেশিরভাগের পেছনেই সাধারণ উদ্দেশ্য হল ফরাসি প্রভাবের বিরোধিতা। এই আপাতদৃষ্টিতে গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তনটি থেকে আমরা কি জানতে পারি?
NSS: অভ্যুত্থান সম্পর্কে কারও মতামত যাই হোক না কেন, সেগুলো নিয়ে বৈজ্ঞানিকভাবে গবেষণা করা দরকার। আফ্রিকায় সামরিক অভ্যুত্থান নিয়ে গবেষণা মূলত পাশ্চাত্য-কেন্দ্রিক এবং এগুলো ঐতিহাসিকভাবে সঠিক নয়। আফ্রিকা ৫৫ টি দেশ নিয়ে একটি বিশাল মহাদেশ। ১৮৮৫ সালে বার্লিনে ঔপনিবেশিক বিভাজনের উদ্দেশ্যে সাংস্কৃতিক সংশ্লিষ্টতা এবং পরিচয় বিবেচনা না করেই আমাদের বর্তমান সীমানা নির্ধারণ করা হয়েছিল। ঔপনিবেশিকতা মূলত একটি নিষ্কাশনমূলক উদ্যোগ এবং সেখানে গণতান্ত্রিকভাবে কোন স্বাধীন প্রাতিষ্ঠানিক বিকাশ হতে দেয়া হয়নি। আরও বাজে ব্যাপার হলো, এটি জাতিগত এবং সাম্প্রদায়িক পরিচয়কে ব্যবহার করেছে এবং সেটা নিয়ে ছিনিমিনি খেলেছে। স্বাধীনতার সময় এই রকম পরিস্থিতি ছিল। এর সাথে কোল্ড ওয়ার প্রেক্ষাপট যোগ করুন, যখন পূর্ব এবং পশ্চিম উভয়ের ক্ষমতাবানরা নিজেদের অনুগ্রহভাজনদের সমর্থন করতে তাদের হস্তক্ষেপ করার বা তারা যাদের পছন্দ করে না তাদের উৎখাত করার অধিকার দেয়। এই রকম দীর্ঘপ্রচলিত ঐতিহাসিক ধারাবাহিকতার পরিপ্রেক্ষিতে, প্রতিটি আফ্রিকান দেশ রাতারাতি আদর্শ "উদার গণতন্ত্র" হয়ে উঠবে- সেটা ভাবতে হলে আপনাকে চরম পক্ষপাতদুষ্ট হতে হবে। আপাতদৃষ্টিতে, এটাই "স্বাভাবিক" - পরিসংখ্যানগত অর্থে - আফ্রিকায় ১৯৬০ থেকে ১৯৯০ সালের মধ্যে (কোল্ড ওয়ার শেষে) অনেকগুলো সামরিক অভ্যুত্থান হয়েছিল। মাত্র চার দশকের মধ্যে এরকম বিপ্লব আনা আফ্রিকার জন্য একটি ঐতিহাসিক "কৃতিত্ব" (১৯শ শতকে তাদের স্বাধীনতার পর থেকে ১৯৯০ পর্যন্ত লাতিন আমেরিকার দেশগুলোর অভিজ্ঞতার সাথে তুলনা করলে)।
২০২০ সাল থেকে আফ্রিকার নয়টি অভ্যুত্থান তাৎক্ষণিক কারণ এবং প্রেরণার দিক থেকে আলাদা। কিন্তু তারা দুটি প্রধান কাঠামোগত নির্ধারক মেনে হয়েছে। প্রথমত, সেগুলো সাহেলিয়ান ব্যান্ড - মালি, বুরকিনা ফাসো, নাইজার, চাদ এবং সুদানের মতো পশ্চিম দ্বারা সামরিকীকৃত দেশগুলোয় হয়েছে। দ্বিতীয়ত, তারা ১৯৬০ সাল থেকে আজ পর্যন্ত অভ্যুত্থানে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন প্রাক্তন ফরাসি উপনিবেশগুলোতে ছাড়া ছাড়া ভাবে সংঘটিত হয়েছিল। ২০২০ সাল থেকে আফ্রিকায় নয়টি সামরিক অভ্যুত্থানের মধ্যে আটটিই ফ্রাঙ্কোফোন দেশগুলোতে হয়েছে।
MG: এই অভ্যুত্থানগুলো আশা জাগিয়েছে যে নব্য ঔপনিবেশিক স্থিতাবস্থা বদলে যেতে পারে। সেইসাথে কেউ কেউ সন্দেহ করেন যে সমাজতন্ত্র, বা শ্রমজীবী জনগণের জন্য গণতান্ত্রিক ক্ষমতা অর্জনের আন্দোলন অসৎ উদ্দেশ্যে অভ্যুত্থান এবং সামরিক সরকারের মাধ্যমে করা হয়। এই অভ্যুত্থান তরঙ্গের দ্বারা মুক্তি লাভের সম্ভাবনার সীমাবদ্ধতা বা বাধাগুলো কী কী? এই সীমা কি কখনো অতিক্রম করা যাবে?
NSS: আমার সহ-লেখক, ফরাসি সাংবাদিক ফ্যানি পিজোর সাথে আমাদের আগামী বইয়ে আমরা ১৭৮৯ - ২০২৩ পর্যন্ত ফ্রান্সের প্রাক্তন আফ্রিকান উপনিবেশগুলোয় গণতন্ত্র এবং নির্বাচনের ইতিহাস পর্যালোচনা করেছি। পরবর্তী বছরগুলোয় সামরিক অভ্যুত্থানের চ্যাম্পিয়ন হওয়ার কারণও আমরা বিস্তারিতভাবে বর্ণনা করেছি। সংক্ষেপে বলতে গেলে, রাষ্ট্রীয় দুর্বলতার কারণে এই দেশগুলোতে অভ্যুত্থান করা সহজ হয়েছে। এছাড়া ক্ষমতায় থাকা নেতাদের বার্ধক্য এবং তরুণ বেসামরিক প্রার্থীদের নির্বাচনী প্রক্রিয়া থেকে বার বার বাদ দেয়া, কারণ ফরাসী বিশেষজ্ঞদের সহায়তায় সাংবিধানিক জালিয়াতি করা হয়েছে- আসল কথা হল, কেবল ইউনিফর্ম পরা তরুণরাই "প্রজন্মগত পরিবর্তন" আনতে পারে। সাহেলিয়ান দেশগুলোতে অভ্যুত্থানকারী তরুণরাই পুরানো নেতাদের উৎখাত করেছে। সাহারার দক্ষিণে ফরাসী ভাষাভাষী আফ্রিকান দেশগুলোর নেতাদের নির্বাচন নিয়ে ফ্রান্সের দীর্ঘ বিভ্রান্তির কারণে, শুধু সামরিক নেতারাই মাঝে মাঝে ফরাসি নব্য ঔপনিবেশিকতার অনুকূলে রাজনৈতিক প্রকল্পের প্রস্তাব দিতে সক্ষম হন। এর সর্বাধিক পরিচিত উদাহারণ হল থমাস সাংকারা, যিনি ৩৩ বছর বয়সে ক্ষমতায় এসেছিলেন আর তার চার বছর পর তাকে হত্যা করা হয়েছিল।
এর মানে এই নয় যে সামরিক বাহিনী চিরকালই প্রগতিশীল। কখনোই না। তবে, যেখানে সাম্রাজ্যবাদ কাঠামোগতভাবে বামপন্থী বুদ্ধিজীবী, নেতা এবং আন্দোলনকে ধ্বংস করেছে এবং স্থানীয় মিত্রদের সাথে মিলে লোকপ্রিয় নেতাদের বার বার দমন করেছে, সেখানে সেনাবাহিনীই একমাত্র সংগঠিত শক্তি যা স্থিতাবস্থা পরিবর্তন করতে পারে। এবং সেই ভয়াবহ অবনতির প্রেক্ষাপটে, এই ধরনের বিদ্রোহের সম্ভাবনা সবার কাম্য ছিল। যদিও মালি, বুরকিনা ফাসো এবং নাইজারে ঘটা অভ্যুত্থান প্রকাশ্যে ফরাসি নব্য-উপনিবেশবাদের (এবং সাহেলে রাশিয়ান এবং মার্কিন সামরিকবাদের বিরোধিতা) বিরোধিতা করেছে, চাদ এবং গ্যাবনের মতো অন্যান্য দেশগুলো খোলাখুলিভাবে ফ্রান্সকে সমর্থন করেছে।
তবে সুখবর হচ্ছে, আফ্রিকান জনগণ আর বাইরের নেতাদের হাতের পুতুল হতে চায় না। প্যান-আফ্রিকানবাদী মনোভাবের পূনর্জাগরনের প্রেক্ষিতে আজ তারা পূর্ণাঙ্গ অর্থনৈতিক অগ্রগতি এবং স্বাধীনতা চায়। যদি এই চলমান বিদ্রোহের মাধ্যমে প্রকৃত স্বাধীনতা অর্জন করতে হয়, তবে সেজন্য "উদার গণতন্ত্র/অভিজাততন্ত্র"-র বাইরে গিয়ে গণতান্ত্রিক আদর্শে তৈরি সংগঠনের প্রয়োজন হবে, যার সীমাবদ্ধতাগুলো সুস্পষ্ট, এবং জনগণের সেবায় এবং জনগণের দ্বারা অর্থনৈতিক রূপান্তরের এজেন্ডা প্রণয়ন করতে হবে। আজ পর্যন্ত এই দুটি শর্ত বাস্তবায়ন করা যায়নি।
MG: দ্য ইন্টারন্যাশনালিস্টের পাঠকদের জন্য — এই সময়ে ফ্রাঙ্কোফোন আফ্রিকার জনগণের মধ্যে সংহতি কেমন?
NSS: আন্তর্জাতিক সংহতির জন্য, সবচেয়ে জরুরী হলো যা ঘটছে তা বোঝা এবং তা এমন একটি ভাষায় প্রচার করা যা পশ্চিমা-কেন্দ্রিক পক্ষপাতদুষ্টতা এবং কন্ঠরোধ থেকে মুক্ত, যা সব দিক থেকে সমালোচনামূলক (দক্ষিণ-দক্ষিণ সংহতির মানে এই নয় যে কমরেড বা মিত্র দেশগুলোর খারাপ আচরণ বরদাশত করা হবে)। এই ক্ষেত্রে আমি আশা করি যে ফরাসী আর্থিক ঔপনিবেশিকরন, পশ্চিমা দেশগুলোর আফ্রিকা মহাদেশকে সামরিকীকরণ, পশ্চিমা নেতাদের আদেশ অমান্যকারীদের ওপর আরোপিত অন্যায় অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা, আফ্রিকার মাটিতে ইউরোপীয় ইউনিয়নের অমানবিক অভিবাসন নীতি- ইত্যাদির বিরুদ্ধে আন্দোলনে প্রগ্রেসিভ ইন্টারন্যাশনাল অবদান রাখতে পারে।
[1] ইংল্যান্ডের ক্ষেত্রে, আন্তর্জাতিক স্বর্ণমান অনুসারে, এর ভারত সম্পর্কিত আর্থিক সাম্রাজ্যবাদের ব্যবস্থাকে উতসা পটনায়ক বিস্তারিতভাবে এবং ওয়েডেন নার্সি মোটা দাগে বর্ণনা করেছেন। নার্সি এবং গেরোড কোজেস্কির গবেষণা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরে যুক্তরাজ্যশাসিত স্টার্লিং অঞ্চল টিকিয়ে রাখতে নাইজেরিয়া এবং ঘানার মতো আফ্রিকান দেশগুলোর ভূমিকার গুরুত্ব তুলে ধরে। পিটার জেমস হাডসন তার ‘Bankers and Empire’- নামক বইয়ে হাইতিয়ান বিপ্লব (১৮০৪) থেকে আজ পর্যন্ত ক্যারিবীয় অঞ্চলে পশ্চিমা শক্তি এবং তাদের বড় বড় ব্যাংকগুলো দ্বারা প্রতিষ্ঠিত সামরিক-অর্থনৈতিক আধিপত্যের ব্যবস্থা তুলে ধরেছেন। আর মার্কিন হেজেমনি নিয়ন্ত্রিত বৈশ্বিক আর্থিক সাম্রাজ্যবাদের ব্যবস্থা নিয়ে মাইকেল হাডসনের গবেষনার তো কোন তুলনাই নেই। এছাড়া আর্থিক নির্ভরতার কম প্রচারিত নজিরের ক্ষেত্রে ফিলিপাইন নিয়ে লুম্বার চমৎকার গবেষণাকর্ম রয়েছে।
ডঃ এনডোঙ্গো সাম্বা সিলা ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট ইকোনমিক্স সোসাইটি (আইডিইএএস) এর আফ্রিকা গবেষণা ও নীতি পরিচালক এবং আফ্রিকান ইকোনমিক অ্যান্ড মানেটারি সভারিনিটি ইনিশিয়েটিভের সহ-প্রতিষ্ঠাতা। তিনি Africa's Last Colonial Currency, Economic and Monetary Sovereignty in 21st Century Africa, Revolutionary Movements in Africa: An Untold Story সহ অসংখ্য বইয়ের লেখক, সহ-লেখক বা সম্পাদক; এবং তিনি নীচে আলোচনা করেছেন তার প্রকাশিতব্য বই De la Démocratie en Françafrique. Une history de l 'émpérialisme électoral (ফ্যানি পিজোর সাথে সহ-লেখক) নিয়ে। তিনি একজন বিশ্ব-চ্যাম্পিয়ন ফরাসি স্ক্র্যাবল খেলোয়াড়।